নীলফামারীর সৈয়দপুর আঞ্চলিক বিমানবন্দর ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে এবার নির্যাতন, অবহেলা ও অধিকার বঞ্চনার অভিযোগ করেছে আনসার সদস্যরা। এব্যাপারে নীলফামারী জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ডেন্ট বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা।
গত ৮ ডিসেম্বর প্রেরিত আবেদনে তারা ম্যানেজারকে মিথ্যেবাদী প্রতারক ও আইন অমান্যকারী হিসেবে উল্লেখ করে ৩ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের দাবী জানিয়েছেন। নয়তো কর্মবিরতিসহ আন্দোলন করার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আনসার ক্যাম্পে ১ জন পিসি, ১ জন এপিসি সহ ৪৪ জন আনসার সদস্য কর্মরত। দীর্ঘ দিন থেকে তারা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। কিন্তু তারা ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত ও অবহেলার শিকার। তার উপর বর্তমান ম্যানেজার আসার পর থেকে নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছে।
বিমানবন্দর আনসার ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মোঃ মনির উদ্দিন বলেন, আমরা চরম আনাসন সংকটে আছি। যে কক্ষে ৫ জন থাকার কথা সেখানে ৮ থেকে ১০ জন থাকছি। দুইতলা বেডে মাথার উপর ফ্যান ঘুরে। যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ম্যানেজার কে অনেকবার বলার পরও কর্ণপাত করেনি। তাছাড়া সরকারী বিধি মোতাবেক ২০% ছুটি পাওনা থাকলেও তিনি দেননা। রান্নার জ্বালানী দেয়ার নিয়ম আছে। অথচ আমরা সেটাও পাইনা।
সহকারী কমান্ডার (এপিসি) মোঃ হযরত আলী বলেন, বিমানবন্দরের রেস্ট হাউজ, পাওয়ার হাউজ, vor ডিউটি কোথাও পোস্ট (ছাউনি) নাই। এমনকি গেট ডিউটিতেও নাই। আর রানওয়ের ৩৩ টি স্থানেতো ভাবাই যায়না। সবগুলো জায়গায় খোলা আকাশের নিচে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান, শীত মাথার উপর দিয়ে যায়। এত কষ্ট করে চাকুরী করলেও বিন্দুমাত্র সহমর্মিতা দেখায়না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এসব দাবী জানানোর কারণে ম্যানেজার প্রায় ১৫ মাস আসে আনসারদের ডিউটি বন্ধ করে দেন। তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর মধ্যস্থতায় আনসারদের ডেকে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। অথচ আজাবধি কোন কিছুই করেননি। বরং তিনি রানওয়ে পরিদর্শনে আসলে দায়িত্বরত আনসারদের সবসময় নিগৃহীত করেন। তাদের ঘাস কাটতে বলেন। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তারা জানান, ম্যানেজার খুবই চতুর, ছলনাময়ী ও মিথ্যেবাদী। সকালে এক কথা বলেন, আর বিকেলে আরেক। কথা দিয়ে কথা রাখেন না। তাই এবার লিখিতভাবে উল্লেখিত সমস্যা সমাধানের দাবী জানিয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেই আবেদন জানিয়েছি। শুক্রবারের মধ্যে সুরাহা না হলে আমরা কর্মবিরতি সহ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবো।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষ এর মোবাইলে কল দিলে কন্ট্রোল অফিসার আব্দুর রশিদ রিসিভ করে জানান, ম্যানেজার ছুটিতে আছেন। আনসারদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে এনিয়ে আভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ম্যানেজার স্যার ঢাকা থেকে ফিরলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বেও বিমানবন্দর ম্যানেজারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সংস্কারের নামে নিম্নমানের কাজ করা, বিমানবন্দর মার্কেটের দোকানদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েও দোকান বরাদ্দে গড়িমসি, আগাম নোটিশ না দিয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র থেকে ট্রান্সমিটার চুরি হলেও প্রশাসনকে অবগত না করা ও দোষী ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দেয়া, বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতার চুরি ও পশ্চিমাংশের দেয়ালের নিচে সুরঙ্গ ও তারহীন পথে সংস্কারে উদাসীনতা। এছাড়া ফ্লাইটের সময় রানওয়েতে কার ড্রাইভিং শিখতে গিয়ে বিমান অবতরণে অল্পের জন্য দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার ঘটনাও রয়েছে। এসব কারণে তার বদলী হলেও অদৃশ্য খুঁটির জোরে মাত্র এক দিনের মধ্যেই স্বস্থানে পূনর্বহাল হোন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন।