ডেস্ক রিপোর্টঃ মৃত ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদের স্ত্রী মিম খাতুনের সঙ্গে শাকিলের ছোট ভাই সাব্বির আহমেদের অবৈধ সম্পর্ক ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী সার্কেল মো. ফিরোজ কবির, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলামসহ পুলিশের একটি চৌকশ টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তিনি জানান, মৃত শাকিল আহমেদের স্ত্রী মিম খাতুনের সঙ্গে শাকিলের ছোট ভাই সাব্বির আহমেদের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এছাড়া শাকিলের সঙ্গে জমিজমা এবং পুকুরে মাছ চাষের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ ছিল সাব্বিরের।
পুলিশ সুপার জানান, স্ত্রী মিম ও ভাই সাব্বিরের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মিমকে সাব্বিরের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে শাকিল। কিন্তু সাব্বির গোপনে একটি মোবাইল ফোন মিমকে দেয়, যা দিয়ে মিম লুকিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে কথা বলতো এবং প্রায়ই তারা বাড়িতে ফাঁকা পেলে ঘনিষ্টভাবে মিশতো। সম্প্রতি আরও কিছু বিষয় নিয়ে দুই ভাইয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জেরে গত ১৯ মে স্ত্রীকে নিয়ে ঈশ্বরদী থানার রূপনগর কলেজপাড়া মহল্লায় আহসান হাবীবের বাড়ির দুই তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠে শাকিল। এতে মিম এবং সাব্বির একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে চলে যাওয়ায় তারা উভয়ই শাকিলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শাকিলের স্ত্রী মিম গত ২৭ মে রাত অনুমানিক ১০টায় পানির সঙ্গে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট গুড়ো করে মিশিয়ে শাকিলকে খাওয়ায়। ২৮ মে শাকিল সারাদিন ঘরের মধ্যে ঘুমায়। সাব্বির ২৮ মে সন্ধ্যার পর শাকিলের ভাড়া বাসায় যাবে মর্মে পূর্বেই মিমকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল। ওই দিন সন্ধ্যার পরে সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। তখন শাকিল ঘুমের ওষুধের প্রভাবে খাটের ওপর ঘুমাচ্ছিল। এ সময় সাব্বির ও মিম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শোফাসেটের কুশন বালিশ নিয়ে শাকিলের ঘরে প্রবেশ করে এবং শাকিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়া শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর ফলে তেমন কোনও প্রতিরোধ করতে পারেনি শাকিল।
তিনি জানান, আসামি মিম ও সাব্বির ভিকটিম শাকিলকে হত্যা করে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পরিকল্পনা করে। সাব্বির ওড়না দিয়ে মিমের দুই পা এবং পাঞ্জাবি দিয়ে শাকিলের দুই হাত ও ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে বাইরের দরজার পাশে ফেলে রাখে। এরপর ঘরের দরজা বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে চলে যায় সাব্বির। এ সময় মিমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য দেওয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় সাব্বির এবং বাসার মেইন গেটের চাবি এক বাড়ির পরের বাড়ির প্রচীরের ওপর রেখে দেয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মিম ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাব্বিরের কাছ থেকে মিমকে দেওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার কথা স্বীকার করে মিমের ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কোনও আসামি জড়িত আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাব্বিরকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটির তদন্ত সমাপ্ত করে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।